চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) দুই নম্বর গেট সংলগ্ন জোবরা গ্রামে গত শনিবার রাতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় ফেসবুক লাইভ করা ছাত্রীদের ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়েছে। এমন বর্বর হুমকির পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দারা শিক্ষার্থীদের বাসা ভাড়া দিতেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। এই ঘটনায় শুধু চবি ক্যাম্পাস নয়, পুরো দেশজুড়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। প্রযুক্তির মাধ্যমে নিপীড়নের ভয়াবহ রূপ এখন সবার সামনে।
আইন বিভাগের এক শিক্ষার্থীর জবানবন্দি অনুযায়ী, হামলার সময় তারা নিজেদের বাসার নিচেই শিক্ষার্থীদের মারধর হতে দেখেন। তারা যখন এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মোবাইল ফোনে লাইভ করছিলেন, তখন স্থানীয়রা দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে এবং ছাত্রীদেরকে ধর্ষণের হুমকি দেয়। পরে, সেনা সদস্যরা এসে তাদের উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়।
এ ধরনের ঘটনা ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। 'নারী অঙ্গন' নামের একটি সংগঠনের খোলা চিঠিতে বলা হয়েছে, গত এক বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের ওপর 'মোরাল পুলিশিং', 'ধর্ষণের হুমকি' এবং 'সাইবার বুলিং' বেড়েছে, যা প্রশাসনের অবহেলার স্পষ্ট ইঙ্গিত। খোলাচিঠিতে আরও বলা হয়েছে, স্বয়ং প্রক্টর নারীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন, যা এই ধরনের নিপীড়নমূলক আচরণের বৈধতা দেয়। এই পরিস্থিতি আমাদের সামাজিক সুরক্ষা এবং আইনের শাসনের প্রতি আমাদের বিশ্বাসকে আঘাত করে।
খোলাচিঠিতে 'নারী অঙ্গন' সাত দফা দাবি জানিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন, স্থানীয় সন্ত্রাসীদের দ্রুত বিচার, শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় উপাচার্য ও প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগ। এই দাবিগুলো শুধু চবির জন্য নয়, বরং সারাদেশের সকল শিক্ষার্থীর জন্য একটি প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর।
এদিকে, স্থানীয় জোবরা ও ফতেপুর এলাকার বাসিন্দারা এক বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষার্থীদের বাড়ি ভাড়া না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের আগুনকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। একজন শিক্ষার্থী, মুকিত উদ্দিন তাউসিফ, ফেসবুকে লিখেছেন যে, যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারে, তবে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া উচিত। এই বক্তব্য হাজার হাজার শিক্ষার্থীর মনের কথা।
এই ঘটনা বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতাকে সামনে নিয়ে এসেছে। একটি আধুনিক সমাজ কীভাবে তার তরুণ প্রজন্মকে এমন হুমকির মুখে ফেলে, তা এখন গভীর বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।