কুষ্টিয়া জেলার ত্রিমোহনী বাজারে এক ভয়ংকর প্রতারণার জাল উন্মোচিত হয়েছে। এখানে বিমল প্রামাণিক নামের এক ব্যক্তি, যিনি একসময় পশু চিকিৎসক ছিলেন, এখন নিজেকে 'মানুষের সর্বরোগের বিশেষজ্ঞ' হিসেবে পরিচয় দিয়ে রমরমা চিকিৎসা ব্যবসা চালাচ্ছেন। কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি বা এমবিবিএস সনদ ছাড়াই তিনি প্রতিদিন শত শত প্রেসক্রিপশনে অ্যান্টিবায়োটিক ও স্টেরয়েড লিখে মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন।
বিমল প্রামাণিক শুধু একাই নন, ত্রিমোহনীতে আরও অন্তত তিনটি ভুয়া ডেন্টাল কেয়ারের সন্ধান পাওয়া গেছে। হাবিবুর রহমান হাবিবের ‘হ্যাপি ডেন্টাল কেয়ার’, তুহিন ইসলামের ‘মডার্ন ডেন্টাল’ এবং আবির আনোয়ারের ‘আনোয়ারা ডেন্টাল কেয়ার’—এইসব চেম্বারে সরকার অনুমোদিত কোনো ডেন্টাল চিকিৎসক নেই। খোদ প্রতিষ্ঠানের মালিকরাই নিজেদের নামের আগে 'ডেন্টিস্ট' পদবি ব্যবহার করে স্পর্শকাতর চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন।
তাদের হাতে ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে রোগীরা যেমন আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন, তেমনি ভুল চিকিৎসার কারণে অঙ্গহানি এবং জীবনের ঝুঁকিও বাড়ছে। অথচ, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) আইন, ১৯৮০ অনুযায়ী, নিবন্ধন ছাড়া চিকিৎসা করা এবং নিজেকে ডাক্তার হিসেবে পরিচয় দেওয়া একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই অপরাধের জন্য ৩ বছরের কারাদণ্ড এবং ১ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, কুষ্টিয়া সিভিল সার্জনসহ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব ভুয়া চিকিৎসকের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের তদারকি বা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। তাদের নীরবতার কারণে এই প্রতারকরা প্রকাশ্যে দিনের পর দিন তাদের অবৈধ চিকিৎসা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয়দের প্রশ্ন, মানুষের জীবন যখন হুমকির মুখে, তখন কি স্বাস্থ্য প্রশাসন 'অদৃশ্য' কারণে নির্বিকার থাকবে? নাকি দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে এই মৃত্যু-বাণিজ্য বন্ধ করা হবে?
প্রশ্ন হলো, যখন আইন আছে, তখন কেন তার প্রয়োগ নেই? আর কত সাধারণ মানুষ এই ধরনের হাতুড়ে ডাক্তারের হাতে প্রতারিত বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে প্রশাসনের ঘুম ভাঙবে?