করোনাভাইরাস মহামারির ধাক্কা কাটতে না কাটতেই এবার নতুন এক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গে। এটি কোনো সাধারণ রোগ নয়, এটি হলো ‘মস্তিষ্ক খেকো অ্যামিবা’। রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তর জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত এই ভয়ানক সংক্রমণে অন্তত ১৬ জনের প্রাণহানি ঘটেছে, যা সাধারণ মানুষের মনে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এই নীরব ঘাতক কীভাবে মানুষের মস্তিষ্কে প্রবেশ করছে, তা নিয়েও চিকিৎসকেরা নতুন করে সতর্ক করছেন।
পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, কলকাতা, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ ও বীরভূম থেকে মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। চিকিৎসকেরা জানান, অনেক রোগীকে প্রথমে সাধারণ মেনিনজাইটিস ভেবে চিকিৎসা করা হয়েছিল। কিন্তু পরে পরীক্ষায় ধরা পড়ে যে, তারা আসলে এই মস্তিষ্ক খেকো অ্যামিবার সংক্রমণে আক্রান্ত। রোগ নির্ণয়ে এই বিলম্বই বহু মানুষের মৃত্যুর কারণ হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা-পরবর্তী সময়ে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় ডায়াবেটিস, কিডনি বা দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্তরা সহজেই এই সংক্রমণের শিকার হচ্ছেন। শিশু ও প্রবীণরা বিশেষ ঝুঁকিতে রয়েছেন। অ্যামিবাটি সাধারণত উষ্ণ ও মিষ্টি জলে থাকে এবং অপরিষ্কার পুকুর, নদী বা দীর্ঘদিন ধরে শোধন না করা সুইমিং পুল থেকে এটি ছড়াচ্ছে। এটি নাক দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে সরাসরি মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্র নষ্ট করে দেয়।
বর্তমানে, সরকারি হাসপাতালগুলোতে সন্দেহজনক রোগীদের ওপর বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে এবং কলকাতার বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালকে এই রোগের চিকিৎসার কেন্দ্রবিন্দু করা হয়েছে। তবে এই মুহূর্তে এর কোনো কার্যকর টিকা আবিষ্কার না হওয়ায় চিকিৎসায় সফলতা আসছে না। তাই চিকিৎসকেরা পরামর্শ দিচ্ছেন, অপরিষ্কার পুকুর বা নদীতে সাঁতার না কাটা এবং সুইমিং পুলে জীবাণুনাশক ব্যবহার করা জরুরি। (সূত্র: পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও চিকিৎসকদের সাক্ষাৎকার)