দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান! নানা বিতর্ক, উত্তেজনা এবং পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মধ্য দিয়ে শেষ হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। রাতভর ভোট গণনা শেষে পাওয়া ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, ছাত্রদল-সমর্থিত প্রার্থীরা ভরাডুবির শিকার হয়েছেন, অন্যদিকে শিবির-সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ ভিপি পদে বড় ব্যবধানে এগিয়ে। এই ফলাফল দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলে। ভোট শুরুর পর থেকেই কারচুপি ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলে প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেলগুলো। রাতভর ভোট গণনা চললেও, পাঁচটি আলাদা ব্যালট শিট (ওএমআর মেশিনে) ব্যবহারের কারণে ফল ঘোষণায় বিলম্ব হয়। তবে প্রাথমিক ফলাফলে শিবির-সমর্থিত প্রার্থী সাদিক কায়েমের ভূমিধস বিজয় এবং ছাত্রদলের প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খানের শোচনীয় পরাজয় স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
এই নির্বাচনের ফলাফল শুধু ডাকসুর চিত্র নয়, বরং দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের ছাত্র রাজনীতির ভবিষ্যতের এক গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত বহন করে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ১৯৯১ সালে ডাকসুতে ছাত্রদলের বিজয় বিএনপিকে ক্ষমতায় আসার পথ করে দিয়েছিল। এবার তার উল্টোটা ঘটলো কি না, তা বুঝতে আগামী জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
এই নির্বাচন চলাকালীন সময়ে ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশ নিয়েও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এতে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হতে পারে এমন আশঙ্কায় অন্তর্বর্তী সরকারের তিন উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী এবং ডিএমপি কমিশনার উভয় দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং কঠোর বার্তা দেন। প্রতিরোধ পর্ষদের ভিপি প্রার্থী শেখ তাসনিম আফরোজ অভিযোগ করেন, ক্যাম্পাসে ‘যুদ্ধংদেহি’ পরিবেশ সৃষ্টি করে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা হয়েছে।
এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত ফলাফল (ভিপি পদে) অনুযায়ী, সাদিক কায়েম (শিবির-সমর্থিত) মোট ৭,০৭৬ ভোট পেয়েছেন, যেখানে আবিদুল ইসলাম খান (ছাত্রদল-সমর্থিত) পেয়েছেন মাত্র ১,৭৮৯ ভোট। তবে জগন্নাথ হলে ভিন্ন চিত্র দেখা যায়, সেখানে আবিদ পেয়েছেন ১,২৭৬ ভোট আর সাদিক মাত্র ১০ ভোট। অন্য প্রার্থীরাও ভোট পেয়েছেন, তবে ব্যবধান অনেক কম। (সূত্র: ডাকসু নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ও বিভিন্ন হল কর্তৃপক্ষ)