প্রতিবাদের মঞ্চ এবার পরিণত হলো রণক্ষেত্রে। দুর্নীতি এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারের সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে জেন-জি প্রজন্মের তরুণদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিলে গুলি চালিয়েছে পুলিশ, যার ফলে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৪ জন নিহত হয়েছেন। এই মর্মান্তিক ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অনেকে। প্রযুক্তির স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের দাবিতে করা এই আন্দোলন কেন এমন করুণ পরিণতি পেল, তা নিয়ে বিশ্বজুড়ে চলছে গভীর উদ্বেগ।
সোমবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, কাঠমান্ডুর নিউ বানেশ্বরে এই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ন্যাশনাল ট্রমা সেন্টারে সাতজন, এভারেস্ট হাসপাতালে তিনজন, সিভিল হাসপাতালে দুজন এবং কাঠমান্ডু মেডিকেল কলেজ ও ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয় টিচিং হাসপাতালে একজন করে মারা গেছেন। নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই genç Gen Z (তরুণ জেন-জি) প্রজন্ম। শতাধিক আহত মানুষ এখনও বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন, যাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
আন্দোলনকারীদের দাবি ছিল দুটি: সরকারি দুর্নীতি বন্ধ এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার। সম্প্রতি নেপাল সরকার ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, ইউটিউব এবং স্ন্যাপচ্যাটসহ ২৬টি অনিবন্ধিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম বন্ধ করে দিয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা তরুণদের মাঝে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। পুলিশ প্রথমে ব্যারিকেড, জলকামান ও টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলেও, আন্দোলনকারীরা তা ভেঙে দেয় এবং কিছু বিক্ষোভকারী সংসদ ভবনের ভেতরে প্রবেশ করে।
এই ঘটনা কেবল একটি বিক্ষোভ নয়, এটি ডিজিটাল যুগে মানুষের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। যখন একটি সরকার নাগরিকদের ভার্চুয়াল কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করে, তখন তার প্রতিক্রিয়া শারীরিক সহিংসতায় রূপান্তরিত হতে পারে। আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে, জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে গুলি চালানো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন। এই ঘটনা প্রমাণ করে, কর্তৃপক্ষ যখন শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের কণ্ঠস্বরকে দমন করতে চায়, তখন তার ফলাফল কতটা ভয়াবহ হতে পারে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাঠমান্ডুর বিভিন্ন এলাকায় কারফিউ জারি করা হয়েছে। (সূত্র: ন্যাশনাল ট্রমা সেন্টার, এভারেস্ট হাসপাতাল ও সিভিল হাসপাতাল)