ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকি! নাটোর পৌরসভা থেকে সরবরাহ করা দূষিত পানি পান করে এক দিনে দুই শতাধিক মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১টা পর্যন্ত ২১৪ জনকে নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এই ঘটনাটি নাগরিকদের মধ্যে এক গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে এখন রোগীদের উপচে পড়া ভিড়। জীবনের জন্য অপরিহার্য এক গ্লাস পানিই কীভাবে মানুষের জন্য মরণফাঁদ হতে পারে, এই ঘটনা তারই এক নির্মম উদাহরণ।
হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে ১৪৯ জন নারী ও শিশু, এবং ৬৫ জন পুরুষ। তাদের অভিযোগ, মঙ্গলবার ও বুধবার থেকে নাটোর পৌরসভার সরবরাহ করা পানি পান করার পর থেকেই তাদের পেটে ব্যথা এবং ডায়রিয়া শুরু হয়। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন পৌরসভার উত্তর পটুয়াপাড়া, ঝাউতলা ও কাঁঠালবাড়ি এলাকার বাসিন্দারা।
আকাশ নামের এক রোগীর স্বজন বলেন, “গতকাল পৌরসভার সরবরাহ করা পানি পান করার পর থেকেই আমার স্ত্রীর পেটে ব্যথা শুরু হয়। রাতে পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি করি। এখানে এসে দেখি একই সমস্যা নিয়ে একের পর এক রোগী আসছে।” আরেক রোগীর স্বজন শহিদুল জানান, তার শিশুসন্তানকেও একই কারণে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মনোবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে, এই ধরনের গণ অসুস্থতা মানুষের মনে এক ধরনের আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করে। যখন সাধারণ মানুষ তাদের মৌলিক অধিকার, যেমন—নিরাপদ পানীয় জল, থেকে বঞ্চিত হয়, তখন রাষ্ট্রীয় সেবার প্রতি তাদের আস্থা হ্রাস পায়। এটি কেবল একটি স্বাস্থ্য সংকট নয়, বরং একটি সামাজিক ও আইনি সংকটও বটে।
খবর পেয়ে নাটোরের জেলা প্রশাসক আসমা শাহিন, পৌর প্রশাসক আসমা খাতুন এবং সিভিল সার্জন ডাক্তার মো. মুক্তাদির আরেফিন দ্রুত ডায়রিয়া ওয়ার্ড পরিদর্শন করেন। সিভিল সার্জন বলেন, “আমরা ধারণা করছি, পানি পান করার ফলেই বেশিরভাগ মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন।” তিনি জানান, পানির নমুনা সংগ্রহ করে আইসিডিডিআরবিতে পাঠানো হয়েছে এবং পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম থাকায় রোগীদের চিকিৎসার কোনো সমস্যা হবে না।
আইনের ছাত্র হিসেবে আমি মনে করি, নিরাপদ পানীয় জল সরবরাহ করা পৌরসভার একটি মৌলিক ও আইনগত দায়িত্ব। এই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার জন্য পৌর কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহি করতে হবে। জেলা প্রশাসক আসমা শাহীন অবশ্য বলেছেন, “পানি ফুটিয়ে না খাওয়ার কারণে এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।” তবে পৌর প্রশাসক আসমা খাতুন জানান, তারা পানি বিশুদ্ধকরণের ব্যবস্থা নিয়েছেন এবং ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখছেন। এই ধরনের সংকট নিরসনে প্রযুক্তির ব্যবহার অপরিহার্য। পানির গুণগত মান নিয়মিত ডিজিটাল মনিটরিং-এর মাধ্যমে যাচাই করা গেলে এই পরিস্থিতি এড়ানো যেত।
(সূত্র: নাটোর সদর হাসপাতাল ও স্থানীয় প্রশাসন)