আবেগ আর বেদনায় ভারী হয়ে উঠেছে শেরপুরের আকাশ। মাত্র ১৮ বছর বয়সী এক তরুণ, আশিক মিয়া, তার অসুস্থ বোনের জন্য ওষুধ কিনতে বেরিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নির্মমভাবে প্রাণ হারিয়েছেন। বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টার দিকে শেরপুর সদর উপজেলার চর মোচারিয়া ইউনিয়নের কেন্দুয়ারচর এলাকায় এই হৃদয়বিদারক ঘটনাটি ঘটে। এই দুর্ঘটনা শুধু একটি পরিবারকেই নিঃস্ব করে দেয়নি, বরং পুরো এলাকার মানুষের মনে এক গভীর শোকের ছায়া ফেলেছে।
জানা গেছে, আশিক তার বোনের জন্য জরুরি ওষুধ কিনতে মোটরসাইকেলে করে নন্দির বাজারের দিকে যাচ্ছিলেন। কিন্তু তার সেই যাত্রাই ছিল জীবনের শেষ যাত্রা। কেন্দুয়ারচরের পাকা সড়কে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ভ্যানগাড়ির সঙ্গে তার মোটরসাইকেলের সংঘর্ষ হয়। এতে তিনি গুরুতর আহত হন এবং ঘটনাস্থলেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
মুন্সিরচর এলাকার ইউপি সদস্য সাজু মিয়া বলেন, “আমরা বাজারে ছিলাম যখন খবর পাই রাস্তায় মরদেহ পড়ে আছে। যখন আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছাই, ততক্ষণে আশিকের পরিবারের সদস্যরা মরদেহ উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে গেছেন।” তার কথায়, “ধারণা করা হচ্ছে, ভ্যানগাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। যেখানে মরদেহ ছিল, সেখানে কিছু কাঠের আসবাবপত্রও পড়ে থাকতে দেখা গেছে।” এই আসবাবপত্রগুলো হয়তো সেই ভ্যানগাড়ির ছিল, যা এখন পর্যন্ত অধরা।
এই ঘটনা আমাদের জন্য এক গভীর দার্শনিক প্রশ্ন তৈরি করে। জীবনের অনিশ্চয়তা কতটা ভয়াবহ, তা এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করে। একজন তরুণ, যে কিনা তার পরিবারের জন্য একটি মানবিক কাজ করতে গিয়েছিল, তার এমন করুণ পরিণতি মেনে নেওয়া কঠিন। আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে, এটি একটি দুর্ঘটনা হলেও, এর পেছনে আরও অনেক বিষয় থাকতে পারে। রাতে ভ্যানগাড়ির চালক যদি অসতর্কভাবে গাড়ি চালিয়ে থাকেন, তবে এটি কেবল দুর্ঘটনা নয়, বরং এক ধরনের অবহেলাজনিত হত্যাকাণ্ড।
শেরপুর সদর থানার তদন্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, “খবর পেয়ে আমরা নিহতের বাড়িতে গিয়েছি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ভ্যানগাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষে তার মৃত্যু হয়েছে।” এটি কেবল একটি খবর নয়, এটি একটি সতর্কবার্তা। আমাদের সড়কগুলোতে প্রযুক্তির ব্যবহার আরও বাড়াতে হবে, যেমন—ক্যামেরা ও ট্র্যাফিক মনিটরিং সিস্টেম। প্রতিটি জীবন অমূল্য, আর তাই এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা রোধে আমাদের সবারই সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
(সূত্র: স্থানীয় ইউপি সদস্য ও শেরপুর সদর থানা পুলিশ)