হৃদয়বিদারক ও নির্মম! মাদারীপুরের কালকিনিতে ঘরের চালায় ঢিল ছোঁড়ার প্রতিবাদ করায় এক সৌদিপ্রবাসীর স্ত্রী পাখি আক্তারকে (২৮) ঘরে ঢুকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এই ভয়ংকর ঘটনাটি ঘটে বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে কালকিনি উপজেলার এনায়েতনগর ইউনিয়নের মাঝেরকান্দি এলাকায়। সবচেয়ে মর্মান্তিক বিষয় হলো, এই হত্যাকাণ্ডটি পাখির চার বছরের ছেলে আইজানের চোখের সামনেই সংঘটিত হয়, যা তার ছোট্ট মনে এক গভীর ক্ষত তৈরি করবে।
পাখি আক্তার, যিনি একজন সৌদিপ্রবাসী সোহাগ হাওলাদারের স্ত্রী, বাড়িতে তার ছোট ছেলেকে নিয়ে একাই থাকতেন। প্রতিবেশীরা জানান, নির্জন এলাকায় বাড়ি হওয়ায় প্রায়শই রাতের আঁধারে দুর্বৃত্তরা তার ঘরের চালায় ঢিল ছুড়ে তাকে ভয় দেখাতো। এই হয়রানির কথা এলাকার মুরুব্বিদের জানালেও কোনো সুরাহা হয়নি। ঘটনার রাতে, আবারও যখন ঘরের চালায় ঢিল ছোঁড়া হয়, তখন পাখি চিৎকার করে ওঠেন। তার চিৎকার শুনে তার চার বছরের ছেলে আইজান ভয়ে দরজা খুলে দেয়। আর তখনই ভেতরে ঢুকে দুর্বৃত্তরা পাখিকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়।
এই ঘটনা কেবল একটি হত্যাকাণ্ড নয়, বরং সমাজের অবক্ষয়ের এক করুণ চিত্র। একজন নারী তার নিজের বাড়িতেও নিরাপদ নন, এটি আমাদের জন্য একটি গভীর চিন্তার বিষয়। অপরাধ মনোবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে, এই ধরনের অপরাধ কেবল শারীরিক হিংসা নয়, বরং এটি একটি ক্ষমতার খেলা, যেখানে অপরাধীরা তাদের আধিপত্য জাহির করতে চায়। যখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়, তখন অপরাধীরা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে।
আইনের ছাত্র হিসেবে, আমি মনে করি, এই ধরনের ঘটনায় পুলিশের উচিত দ্রুত এবং কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া। শুধু হত্যাকারীদের ধরা নয়, বরং তাদের এই অপরাধের পেছনের উদ্দেশ্য এবং তাদের মানসিকতা সম্পর্কেও তদন্ত করা প্রয়োজন। প্রতিবেশীদের ভাষ্য অনুযায়ী, দীর্ঘদিন ধরে এই হয়রানি চলছিল। এটি একটি বড় আইনি ত্রুটি, কারণ আগে থেকেই অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এই ঘটনার পর কালকিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম সোহেল রানা জানান, “নির্জন এলাকায় বাড়ি হওয়ায় মুহূর্তে হত্যা করে পালিয়ে গেছেন হত্যাকারীরা। জড়িতদের ধরতে পুলিশ কাজ শুরু করেছে।” এখন প্রশ্ন হলো, এই কঠোর পদক্ষেপ কি আরও আগে নেওয়া যেত না?
(সূত্র: কালকিনি থানা ও স্থানীয় প্রতিবেশী)