যেখানে স্নেহ, ভালোবাসা আর নির্ভরতার প্রতীক হওয়ার কথা, সেখানে এক নানি টাকার লোভে নিজের ২০ দিন বয়সী নাতিকে বিক্রি করে দিয়েছেন! এই হৃদয়বিদারক ঘটনাটি ঘটেছে কক্সবাজারের চকরিয়ায়, যা পুরো জাতিকে হতবাক করেছে। এই জঘন্য অপরাধের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ শিশুটির নানিসহ তার বোনকে গ্রেপ্তার করেছে এবং নবজাতককে উদ্ধারে জোর প্রচেষ্টা শুরু করেছে।
ঘটনার সূত্রপাত হয় গত ২৭ আগস্ট সকালে, যখন মা জেসমিন আক্তার তার কন্যাকে নানির কাছে রেখে পাশের দোকানে যান। ফিরে এসে দেখেন, তার জীবনের একমাত্র অবলম্বন শিশুটি নেই, আর নানিও উধাও। তিন দিন ধরে পাগলের মতো খুঁজেও কোনো হদিস পাননি অসহায় মা। পরে নানি ফিরে এলে তাকে জেরা করলে তিনি প্রথমে লুকানোর চেষ্টা করেন এবং পরে নিজের মেয়েকেই মারধর করতে উদ্যত হন।
জেসমিন আক্তারের অভিযোগ, তার মা নুরুন্নাহার, খালা ও খালাতো ভাই মিলে টাকার বিনিময়ে তার সন্তানকে বিক্রি করে দিয়েছেন। একজন মা, যার স্বামী তাকে ভরণপোষণ দেন না এবং যিনি ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করেন, তার জন্য এমন চরম আঘাত মেনে নেওয়া অসম্ভব। তিনি অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলেন, "আমার কোনো স্বপ্ন ছিল না, শুধু সন্তান দুটোকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমার মা-ই আমার ২০ দিনের শিশুকে বিক্রি করে দিয়েছে!"
এই ঘটনা আইনের চোখে অত্যন্ত গুরুতর। ওসি তৌহিদুল আনোয়ার বলেন, "একটি শিশু নানির কাছেও নিরাপদ নয়—এ ঘটনা তারই প্রমাণ।" শিশু বিক্রি মানব পাচারের একটি ভয়াবহ রূপ, যা কঠোর আইন দ্বারা দণ্ডনীয়। মনস্তাত্ত্বিকভাবে, একজন আপনজন যখন এমন বিশ্বাসঘাতকতা করে, তখন তা মানুষের মধ্যে সম্পর্কের প্রতি গভীর অবিশ্বাস তৈরি করে। এই ঘটনা প্রমাণ করে, মানবিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় কীভাবে পরিবার নামক পবিত্র বন্ধনকেও ভেঙে দিতে পারে।
পুলিশি তৎপরতায় শিশুটিকে চট্টগ্রাম থেকে উদ্ধারের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ওসি বলেন, "ক্রেতারা বাধ্য হয়ে শিশুটিকে থানায় ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়ায় রয়েছে।" (সূত্র: চকরিয়া থানা পুলিশ)