ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার পারদ যখন তুঙ্গে, তখন বন্ধু রাষ্ট্র রাশিয়া ভারতকে আরও অত্যাধুনিক এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সরবরাহ করতে যাচ্ছে। ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই নতুন সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহের বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে ইতিমধ্যেই জোর আলোচনা চলছে। এই প্রযুক্তিকে ভারতীয় সামরিক বাহিনী ‘আকাশের অভেদ্য ঢাল’ হিসেবে বর্ণনা করে, যা পাকিস্তানের সঙ্গে সাম্প্রতিক যুদ্ধে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছে। এই সামরিক শক্তি বৃদ্ধি কেবল ভারতের প্রতিরক্ষা নয়, বরং পুরো দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষমতার ভারসাম্যে বড় ধরনের পরিবর্তন আনছে।
ভারতীয় প্রতিরক্ষা সূত্রের খবর, ২০২৬ সালের মধ্যে একটি এবং ২০২৭ সালে আরও একটি এস-৪০০ ইউনিট সরবরাহের প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এর আগে ২০১৮ সালের চুক্তির অধীনে পাঁচটি ইউনিটের মধ্যে দুটি এখনও হাতে পায়নি ভারত। এই বিলম্বের বিষয়টি ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং গত বছর রাশিয়া সফরে এবং সাম্প্রতিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকেও তুলে ধরেছিলেন। ভারত এখন এই দুটি ইউনিটের পাশাপাশি আরও কিছু এস-৪০০ কেনার পরিকল্পনা করছে, যা তাদের উচ্চাভিলাষী ‘সুদর্শন চক্র’ প্রকল্পের অংশ। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ভারত নিজেদের আকাশসীমাকে একটি দুর্ভেদ্য দুর্গ হিসেবে গড়ে তুলতে চায়।
রাশিয়ার ফেডারেল সার্ভিস ফর মিলিটারি-টেকনিক্যাল কো-অপারেশনের প্রধান দিমিত্রি শুগায়েভ রুশ বার্তা সংস্থা তাসকে বলেছেন, "ভারতের কাছে ইতিমধ্যেই আমাদের এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা রয়েছে। আমাদের সহযোগিতা আরও বাড়ানোর সম্ভাবনা আছে, যার অর্থ নতুন সরবরাহ। বর্তমানে আমরা আলোচনার পর্যায়ে আছি।"
ভারতীয় বিমানবাহিনীর প্রধান এ পি সিং এই অস্ত্রকে ‘গেম-চেঞ্জার’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। সম্প্রতি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ‘অপারেশন সিঁদুর’ চলাকালে এস-৪০০ সিস্টেমের কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়েছে। পাকিস্তান একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেও এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করতে পারেনি।
প্রযুক্তিগত দিক থেকে এস-৪০০ সত্যিই এক বিস্ময়। এটি ৬০০ কিলোমিটার দূর থেকে শত্রুপক্ষের কার্যকলাপ শনাক্ত করতে পারে এবং একই সঙ্গে ১০০টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। এর সর্বোচ্চ পাল্লা ৪০০ কিলোমিটার, এবং এটি বোমারু বিমান, যুদ্ধবিমান, ড্রোন, এমনকি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও ধ্বংস করতে পারে।
এই সামরিক চুক্তি শুধু দুটি দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক লেনদেন নয়, এটি আঞ্চলিক ক্ষমতার রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করছে। যখন আধুনিক প্রযুক্তি সামরিক শক্তিতে এক বিশাল পার্থক্য তৈরি করে, তখন এস-৪০০ এর মতো সিস্টেমের মালিকানা একটি দেশের জন্য কৌশলগত সুবিধা নিয়ে আসে। এটি ভারতের সামরিক মনোবিজ্ঞানকে আরও শক্তিশালী করবে এবং প্রতিপক্ষকে নিরস্ত করার ক্ষেত্রে এক বড় ভূমিকা পালন করবে।
(সূত্র: এনডিটিভি, তাস)