কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের রায়টা গ্রামে এলাকাবাসী এক বিলুপ্তপ্রায় বন্যপ্রাণীকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। মানুষের 'বীরত্ব' আর 'প্রাণহানির আশঙ্কায়' লাঠিসোঁটা, ঢাল, আর সোরকি নিয়ে এই নির্দোষ প্রাণীটির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল একদল উন্মত্ত জনতা। এই ঘটনা কি প্রমাণ করে যে, মানবসভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে আমাদের মানবিকতা পেছনের দিকে হাঁটছে?
ভয়, নাকি অজ্ঞতা?
মানুষের মধ্যে বন্যপ্রাণী দেখলে যে এক ধরনের 'আদিম উন্মত্ততা' জেগে ওঠে, তা এই ঘটনায় আবারও প্রমাণিত। এলাকাবাসী সামান্য ঝুঁকি এড়াতে পারতো প্রাণীটিকে কৌশলে আটক করে বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করার মাধ্যমে। কিন্তু তারা বেছে নিয়েছে সবচেয়ে সহজ, কিন্তু নৃশংস পথ।
আমাদের দেশে ইতোমধ্যেই অনেক বন্যপ্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এই ধরনের ঘটনা সেই প্রক্রিয়াকে আরও দ্রুত করছে। মানুষের এই আচরণ কি তাদের অজ্ঞতা এবং অশিক্ষার ফল, নাকি এটি তাদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা এক সুপ্ত পশুবৃত্তির প্রকাশ?
'পৃথিবী শুধু মানুষের জন্য?'
আমরা নিজেদেরকে সৃষ্টির সেরা জীব মনে করি, কিন্তু এই ধরনের ঘটনা প্রমাণ করে যে আমরা এখনো প্রকৃতির অংশ হিসেবে নিজেদের ভাবতে শিখিনি। আমরা মনে করি, এই পৃথিবী কেবল মানুষের জন্য বরাদ্দ। এখানে অন্য কোনো প্রাণীর, কোনো নদী-নালার, বা কোনো পাহাড়-পর্বতের ঠাঁই নেই।
এই মানসিকতা আমাদের পরিবেশের জন্য এক বড় হুমকি। যদি আমরা নিজেদেরকে প্রকৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে না ভাবি, তাহলে আমাদের নিজেদের অস্তিত্বও একসময় সংকটের মুখে পড়বে।
প্রশ্ন হলো, যখন আমরা বন্যপ্রাণীকে নির্বিচারে হত্যা করি, তখন কি আমরা আমাদের নিজেদেরই ধ্বংসের পথ খুলে দিচ্ছি না?