তিন দফা দাবি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন অভিমুখে শান্তিপূর্ণ মিছিল নিয়ে যাচ্ছিলেন বুয়েটসহ দেশের বিভিন্ন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। কিন্তু পথে ঘটে এক ভয়াবহ ঘটনা। পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাস এবং জলকামান ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে। এই ঘটনায় অন্তত ৬০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে দাবি করা হচ্ছে। দেশের সর্বোচ্চ মেধা ও প্রজ্ঞার অধিকারী এই তরুণদের ওপর এমন নৃশংস হামলা কেন? এটি কি 'অন্তর্বর্তী' সরকারের আসল চেহারা?
শান্তিপূর্ণ আন্দোলন, কেন সহিংসতা?
গতকাল বুধবার বেলা ১১টা থেকে শিক্ষার্থীরা রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়েছিলেন। তাদের মূল দাবিগুলো ছিল:
ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নামের আগে 'প্রকৌশলী' ব্যবহার বন্ধ করা।
ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের কাউকে নবম গ্রেডে পদোন্নতি না দেওয়া।
দশম গ্রেডের চাকরিতে স্নাতক প্রকৌশলীদের সুযোগ দেওয়া।
শাহবাগে আলোচনার মধ্যেই শিক্ষার্থীরা হঠাৎ যমুনার দিকে রওনা হলে পুলিশ তাদের পথ আটকে দেয়। পুলিশ বলছে, শিক্ষার্থীরা ইট-পাটকেল ছুঁড়েছে, যার ফলে পুলিশের আট সদস্য আহত হয়েছেন। কিন্তু আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলছেন, তারা সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ ছিলেন এবং পুলিশ বিনা উস্কানিতে তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে।
দেশজুড়ে প্রতিবাদের আগুন: নীরব থাকবে কি প্রশাসন?
ঢাকার এই হামলার খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে দেশজুড়ে। এর প্রতিবাদে:
রুয়েট ও কুয়েটের শিক্ষার্থীরা সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন।
চুয়েটের শিক্ষার্থীরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গায়েবানা নামাজ পড়েছেন, যা এক তীব্র প্রতিবাদের ইঙ্গিত।
এই গণবিক্ষোভ কি প্রমাণ করে যে, দেশের তরুণ সমাজ তাদের অধিকারের প্রশ্নে আর কোনো আপস করতে রাজি নয়?
যৌক্তিক দাবি নাকি রাজনৈতিক চাপ?
সরকার এই ঘটনায় একটি আট সদস্যের কমিটি গঠন করলেও আন্দোলনকারীরা তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাদের দাবি, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে প্রকাশ্যে এসে ক্ষমা চাইতে হবে এবং হামলার সাথে জড়িত পুলিশ সদস্যদের বরখাস্ত করতে হবে।
এই ঘটনাটি শুধু একটি বিচ্ছিন্ন আন্দোলন নয়, এটি দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার গভীর সংকটের এক প্রতিফলন। দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব যারা, তাদের কণ্ঠরোধ করে কি আমরা একটি সুস্থ ও গণতান্ত্রিক সমাজ গড়তে পারবো?
প্রশ্ন হলো, যে সরকার গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে, সেই সরকার কি এখন নিজেই ভিন্নমতের ওপর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে?