জনপ্রিয় গণমাধ্যমের নাম ও লোগো ব্যবহার করে তৈরি হচ্ছে অসংখ্য নকল বা ভুয়া ফেসবুক পেজ। এসব পেজ থেকে ছড়ানো হচ্ছে বিভ্রান্তিকর ও ভুল তথ্য, যা মূলধারার গণমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলছে। দেশের এই 'তথ্য সন্ত্রাস' মোকাবিলায় এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা মনে করেন, এই অপতৎপরতা রোধে তিনটি মূল করণীয় রয়েছে।
ভুয়া পেজ কেন তৈরি হচ্ছে: রাজনৈতিক উদ্দেশ্য, নাকি শুধুই বিশৃঙ্খলা?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সাইফুল আলম চৌধুরী বলেন, "যখন রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা থাকে, তখন সারা বিশ্বে এ ধরনের বিষয় লক্ষ্য করা যায়। নির্বাচনের আগে মতামতকে প্রভাবিত করার জন্য এসবের ব্যবহার বেড়ে যায়।" তিনি আরও বলেন, নিখুঁতভাবে নকল করা ফটোকার্ড এবং লোগো দেখে সাধারণ মানুষ সহজেই বিভ্রান্ত হচ্ছে। ফলে, সমাজে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে, যা ক্ষেত্রবিশেষে সংঘর্ষেও রূপ নিতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, তিন করণীয়
এই জটিল সমস্যার সমাধানে বিশেষজ্ঞরা তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের ওপর জোর দিয়েছেন:
১. রাষ্ট্রীয় পলিসি নির্ধারণ: এই ধরনের ভুয়া পেজ বন্ধ করার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট রাষ্ট্রীয় পলিসি থাকা জরুরি। ড. সাইফুল আলম চৌধুরী বলেন, "একটা-দুটা পেজ বন্ধ করে কোনো সমাধান হবে না। একটা বন্ধ করা হলে আরেকটা খুলবে।" এক্ষেত্রে গণমাধ্যমের কপিরাইট সুরক্ষার বিষয়টিও বিবেচনায় নিতে হবে।
২. শক্তিশালী মনিটরিং ব্যবস্থা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. বি এম মইনুল হোসেন বলেন, "সরকারকে বিজনেসের সুরক্ষার বিষয়ে চিন্তা করতে হবে। অন্যের ডিজাইন, লোগো ব্যবহার করে অপতথ্য ছড়িয়ে রেপুটেশন নষ্ট করার বিষয়টি মনিটরিং করতে হবে।" তিনি আরও বলেন, এই মুহূর্তে একটি কার্যকর মনিটরিং সেল গঠন করা এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
৩. মিডিয়া লিটারেসি বাড়ানো: ড. সাইফুল আলম চৌধুরীর মতে, এই সমস্যার সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হলো মানুষকে সচেতন করা। "মিডিয়া লিটারেসি বাড়াতে হবে, যা স্কুল থেকে শুরু করা উচিত।" তিনি ভেজাল খাদ্যের সঙ্গে 'ভেজাল তথ্যের' তুলনা করে বলেন, যেমন মানুষ মেয়াদ দেখে পণ্য কেনে, তেমনি তাদের নির্ভুল তথ্য যাচাই করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
প্রশ্ন হলো, যখন ফেসবুকের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো এই সমস্যা সমাধানে তেমন আগ্রহী নয়, তখন কি কেবল এই তিন করণীয় আমাদের জন্য যথেষ্ট? এই 'তথ্য সন্ত্রাস' মোকাবিলায় একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আপনার কী ভূমিকা থাকা উচিত?