পল্টনের শহীদ (ক্যাপ্টেন) এম. মনসুর আলী স্টেডিয়ামের হ্যান্ডবল কোর্টে এক অসাধারণ দৃশ্য। এক খেলোয়াড়, যিনি তার এক হাতে ১১ মাসের শিশু সন্তানকে আগলে রাখেন, আর অন্য হাতে হ্যান্ডবল নিয়ে প্রতিপক্ষকে মোকাবিলা করেন। তিনি হলেন বাংলাদেশ পুলিশ দলের অন্যতম লড়াকু খেলোয়াড় তানজিমা আক্তার।
তানজিমার এই গল্প যেন বাংলাদেশের হাজারো নারী খেলোয়াড়ের চিরায়ত সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি। একজন মা, একজন খেলোয়াড়, এবং একজন পেশাদার পুলিশ অফিসার হিসেবে তানজিমা প্রমাণ করেছেন, মাতৃত্ব কোনো স্বপ্নের পথে বাধা হতে পারে না, বরং তা লড়াই করার শক্তি জোগায়।
মাতৃত্বের সংগ্রাম: যখন খেলার মাঠই দ্বিতীয় বাড়ি
প্রতিযোগিতার মাঝে তানজিমাকে দেখা যায়, ম্যাচের পর দ্রুত মাঠের পাশে ছুটে যেতে। সেখানে তার ১১ মাস বয়সী ছেলে তাওহিদুল কবির সতীর্থের কোলে অপেক্ষা করে। তানজিমার কথায়, “মাঝে মাঝে বাবুকে রেখে খেলতে কষ্ট হয়। তারপরও সব কিছু মিলিয়ে মানিয়ে নিচ্ছি।” মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষে খেলার টানে তিনি আবার মাঠে ফিরেছেন। সন্তানের কান্নাকাটি তার মনকে কষ্ট দিলেও, দায়িত্বের প্রতি তার দৃঢ়তা অটল।
পুলিশে কর্মরত তানজিমার স্বামী তানভীর আহমেদও তাকে সব সময় সমর্থন দেন। তাদের সম্মিলিত চেষ্টায় তানজিমার খেলা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছে।
খেলার মাঠ থেকে রাজপথ: অলরাউন্ডার তানজিমা
তানজিমা কেবল একজন হ্যান্ডবল খেলোয়াড় নন, তিনি একজন পেশাদার পুলিশ অফিসারও। তিনি যখন খেলেন না, তখন রাস্তায় মিছিল-মিটিংয়ে দায়িত্ব পালন করেন। জুলাই মাসের আন্দোলনের সময় তিনি অফিসে ডিউটি করেছেন, কিন্তু অন্য সময় তিনি রাজপথের দায়িত্বও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেন।
পুলিশের আন্তঃবাহিনী হ্যান্ডবলে নিয়মিত খেলেন তানজিমা। তার স্বপ্ন, বাংলাদেশের হয়ে জাতীয় দলের জার্সিতে খেলা। তিনি বলেন, "ছেলে আরেকটু বড় হলে তবেই ক্যাম্পে যাব।"
প্রশ্ন হলো, তানজিমার মতো অসংখ্য লড়াকু মা যখন তাদের স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখতে লড়াই করছেন, তখন আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্র কি তাদের জন্য যথেষ্ট সমর্থন ও পরিবেশ নিশ্চিত করতে পেরেছে?