পাকিস্তানে আকস্মিক বন্যায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দেশটির উত্তরাঞ্চল। এখন পর্যন্ত প্রায় ৩৫০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে, এবং ২০০ জনেরও বেশি নিখোঁজ রয়েছে। নতুন করে শুরু হওয়া বৃষ্টির কারণে উদ্ধার অভিযানও স্থগিত করা হয়েছে, যা জীবিতদের খুঁজে বের করার আশা কমিয়ে দিচ্ছে।
প্রকৃতির নির্মমতা: বুনেরে ভেসে গেছে ১২টি গ্রাম!
গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া মুষলধারে বৃষ্টিপাতের কারণে খাইবার পাখতুনখোয়ায় আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধস হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বুনের জেলা, যেখানে অন্তত ১২টি গ্রাম পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। স্বেচ্ছাসেবকরা কাদা ও ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া মরদেহ উদ্ধারে শত শত উদ্ধারকর্মীকে সহায়তা করছিলেন, কিন্তু নতুন করে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় সেই কাজও বন্ধ হয়ে গেছে।
এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ৩১ বছর বয়সী স্বেচ্ছাসেবক নিসার আহমেদ বলেন, "কাদা ও পাথরের নিচে এখনো অসংখ্য মরদেহ চাপা পড়ে আছে। কেবল ভারী যন্ত্রপাতি দিয়ে সেগুলো উদ্ধার করা সম্ভব।" তিনি আরও জানান, নতুন বৃষ্টির কারণে ত্রাণ বিতরণের জন্য তৈরি অস্থায়ী সড়কগুলোও ধ্বংস হয়ে গেছে।
নিশ্চিন্ত মানুষগুলোর আর্তনাদ: 'এখন হালকা বৃষ্টি হলেও আমরা ভয় পাচ্ছি'
৩৫ বছর বয়সী স্থানীয় বাসিন্দা গুলাম হোসেন বলেন, "এখন অল্প বৃষ্টি হলেও আমরা ভয় পাচ্ছি। কারণ সেদিন হালকা বৃষ্টি হয়েছিল। নিশ্চিন্ত থাকা মানুষগুলো ঝড়ের তাণ্ডবে ভেসে গেছে।" ১৮ বছর বয়সী হযরত উল্লাহ জানান, "শিশু এবং নারীরা ভয়ে পাহাড়ের দিকে পালাচ্ছে এবং চিৎকার করছে।" এই ভয়াবহ পরিস্থিতি সেখানকার মানুষের মনে এক গভীর ট্রমার সৃষ্টি করেছে।
আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নতুন করে আকস্মিক বন্যার সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সহায়তার পাশাপাশি পাকিস্তানের জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা জরুরি।
প্রশ্ন হলো, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য কি বিশ্বনেতারা প্রস্তুত? এই বিপর্যয় থেকে বাঁচতে কি কেবল উদ্ধার অভিযানই যথেষ্ট, নাকি এর পেছনে আরও গভীর কোনো সমাধানের প্রয়োজন?