অন্তর্বর্তী সরকারের ১৪ জন উপদেষ্টা ও বিশেষ সহকারীর সহকারী একান্ত সচিবদের (এপিএস) বেতন এক লাফে ৩১ হাজার টাকার বেশি বাড়ানো হয়েছে। যেখানে শুরুতে তাদের বেতন ছিল ২২ হাজার টাকা, সেখানে রাতারাতি তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৫৩ হাজার ৬০ টাকা। এই অবিশ্বাস্য বৃদ্ধি কি কোনো বিধি-বিধান মেনে করা হয়েছে, নাকি এটি রাজনৈতিক স্বজনপ্রীতির নতুন এক দৃষ্টান্ত?
আইন কী বলে, আর কী করা হলো?
আইন অনুযায়ী, সরকারি কর্মকর্তাদের বাইরে থেকে এপিএস নিয়োগ দিলে তাদের নবম গ্রেডের শুরুর ধাপ, অর্থাৎ ২২ হাজার টাকা বেতনে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু মেয়াদের শেষ দিকে এসে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এক চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে তাদের বেতন একবারে বাড়িয়ে নবম গ্রেডের সর্বোচ্চ ধাপ, ৫৩ হাজার ৬০ টাকা নির্ধারণ করে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তার ভাষ্যমতে, "এপিএসদের মর্যাদা সহকারী সচিবদের সমান, আর সহকারী সচিবদের সর্বোচ্চ বেতন স্কেল ৫৩ হাজার ৬০ টাকা, সে কারণে তাঁদের বেতন ৫৩ হাজার ৬০ টাকা নির্ধারণের সিদ্ধান্ত হয়।" কিন্তু প্রশ্ন হলো, একজন সহকারী সচিবকে সর্বোচ্চ বেতনে পৌঁছাতে যেখানে ১৮ বছর সময় লাগে, সেখানে এই এপিএসদের মাত্র কয়েক মাসেই সেই বেতন কেন দেওয়া হলো?
বেতন এখন পঞ্চম গ্রেডের থেকেও বেশি!
এই বেতন বৃদ্ধির ফলে একটি নজিরবিহীন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। একজন এপিএসের বেতন এখন পঞ্চম গ্রেডের একজন পিএসের বেতনের থেকেও বেশি! উদাহরণস্বরূপ, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের একান্ত সচিব মুহাম্মদ শিহাব উদ্দীনকে পঞ্চম গ্রেডের শুরুর বেতন ৪৩ হাজার টাকায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যা এই এপিএসদের থেকে অনেকটাই কম।
জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া এই ঘটনাকে সরাসরি 'আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতি' বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, "কোন কর্তৃত্ববলে সর্বোচ্চ ধাপে বেতন নির্ধারণ করল? সর্বোচ্চ ধাপে বেতন নির্ধারণ করতে হলে বিধি জারি করে করতে হবে। এসব কী হচ্ছে! সরকারি কর্মকর্তারা কি বিধিবিধান জানেন না?"
প্রশ্ন হলো, যে সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার কথা বলে ক্ষমতায় এসেছে, সেই সরকারের অধীনেই কি এমন আর্থিক অনিয়ম হচ্ছে? এই ঘটনা কি প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতা বদল হলেও দুর্নীতির সংস্কৃতি বদলায়নি?